কলেজ জীবনের কিছু কথা


প্রত্যয়,ফ্রাংকেল,মর্নিং।
📷অনন্ত


আমার কলেজ জীবন শুরু হয় আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজে। আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই প্রিয় কলেজে কিন্তু কলেজটাকে কিছু দিতে পেরেছি কি না তা বলতে পারছি না।।এই কলেজের প্রতি আমি অনেকভাবে ঋনী। আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ময়মনসিংহ শহরে অবস্থিত একটি কলেজ। ২৪ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে পুলিশের গুলিতে শহীদ আলমগীর মনসুর মিন্টুর নামে এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। আমার কলেজ যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে।কিন্তু  আমি যে বছর কলেজে ভর্তি হই সে বছরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথম অনলাইনের মাধ্যমে কলেজ ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করে। অনেকে ভোগান্তি বেশি হয়েছে বলে দাবি জানালেও, আমি ততটা ভোগান্তির সম্মুখীন হয়নি। আমি এবং আমার বন্ধু লিমন আমরা সরাসরি কলেজে ভর্তি হওয়ার সু্যোগ পেয়েছিলাম ।মিন্টু কলেজে আসলে আমার বন্ধু লিমনের কারনেই আসা হয়েছিল তার পূর্বে আমি এই কলেজের নামও জানতাম না। কলেজে প্রথম ক্লাস ছিল ওরিয়েন্টেশন ক্লাস যেখান কলেজের নিয়মকানুন এবং আমাদের পড়ালেখার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। তখন একজন শিক্ষক বলেছিল তোমাদের এখনি সময় নিজেকে জানার আর চেনার জীবনটাকে উপলব্ধি করার। এই কলেজ জীবনের মাধ্যমেই তোমরা তোমাদের জীবন গড়তে পারবে।
কথাগুলো তখন তেমনটা গুরুত্ব দেয় নি।কিন্তু এখন কথাগুলো মগজে গিয়ে লাগে। ওরিয়েন্টেশন ক্লাস করার সময় কলেজ মাঠে অনেকগুলো বন্ধুর সাথে পরিচয় হতে পেরে খুন আনন্দ লেগেছিল মনে কিন্তু  যখন ক্লাসে যাওয়া হয় তখন আমার বন্ধু বলতে প্রথম ক্লাসে কাউকে পাওয়া যায়নি তখন কিছুটা খারাপ লাগছিল। আর লিমন বন্ধু তো কলেজে নিয়মিত আসত না।বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা করার কারনে  আমার স্বজাতি বন্ধু বলতে গেলে আমার ক্লাসে ছিলই না।  কারণ আমার স্বজাতির খুব কম সংখ্যক মানুষ বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করে। কয়েকদিন নিয়মিত ক্লাস করার পর আমার স্বজাতি একটা বন্ধু পাওয়া যায় তার নাম দুর্জয়।আমাদের দুজনের অনেক ভাল সম্পর্ক ছিল যা বলার মত, একজন আরেকজনকে ছাড়া ক্লাসে থাকতাম না।দুজন একই সাথে ব্র‍্যাঞ্চে বসতাম আর সব জায়গায় একসাথে চলাফেরা ছিল।কলেজে প্রথম দিকে দুর্জয় ছাড়া আমার  কারোর সাথে তেমন মেলামেশা করা হত না যদিও অন্যান্য বিভাগে অনেক বন্ধুদের সাথে পরিচয় ছিল।প্রথম কয়েকটি মাস বন্ধুদের সাথে পরিচয় হতে হতেই এবং কলেজের শিক্ষকদের চিনতে আর জানতে জানতেই সময় পেরিয়ে যায়।আমাদের কলেজে মাসিক পরীক্ষ চালু ছিল। এই মাসিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন না করা হলে জরিমানা চালু ছিল তাই নিয়মিত মাসিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতাম। পাস এবং ফেইল দুটি শব্দের অনেকটা মিল আছে।ফেইল না করলে আমার মনে হয় ছাত্র জীবনটাই বৃথা কারন ফেইল না করলে বুঝা যায় না পরবর্তীতে পাস করার আনন্দ যে কতটুকু।যাইহোক আমাদের বিজ্ঞান বিভাগে মোট বিষয় ছিল ৭টি।তারমধ্যে ৫ট বিষয়েই অকৃতকার্য হয়েছিলাম আমি এবং আমার বন্ধু দুর্জয়।এখনও স্পষ্ট মনে আছে কিছু কিছু বিষয়ে শূন্য দুই চার পেয়েছিলাম। দুজনই একইরকম ছাত্র ছিলাম।তবে পরবর্তী মাসিক পরীক্ষাগুলো তেমনটা খারাপ হয়নি। কিন্তু ফেইল করা বিষয় সবসময় ছিল। কলেজ জীবন ছিল আনন্দময় ব্যস্ত সময়।দেখতে দেখতে ছয়মাস চলে যায়। কলেজে দুইবার সেমিস্টার পরীক্ষা হত ছয়মাস অন্তর অন্তর।কলেজে ছয়মাস কিভাবে কেটে গেল কোন রকম টের পায়নি। ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা দিলাম ৪টা বিষয়ে অকৃতকার্য।প্রথম অবস্থায় তাই কিছু বুঝে উঠতে পারি নি। ১ম সেমিস্টার পরীক্ষার কয়েক দিন পর দুর্জয় কলেজে অনিয়মিত আসত।তখন আমার ক্লাসে একা একা বসতে হত যদিও খারাপ লাগত তারপরও নিয়মিত ক্লাসে যাওয়া হত।দুর্জয়কে ফোন করে কেন ক্লাসে নিয়মিত আসেনা জিজ্ঞাসা করলে তেমন কোন উত্তর পাওয়া যেত না।কিছুদিন পর শুনি তার মা অনেক অসুস্থ ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে আনা হয়েছে।তখন বুঝতে পারলাম মাকে সেবা করার জন্য ক্লাসে ঠিকমত আসা হত না।তাকে সান্তনা দেওয়ার কোন ভাষা ছিল না।শুধু এইটুকু বলেছিলাম অনেক ক্লাস মিস করতেছিস বেশি মিস করিস না পিছিয়ে যাবি। যখন উচ্চ বিদ্যালয়ে(স্কুলে) পড়াশুনা করতাম তখন সবাই বলত মাধ্যমিকে(কলেজে) উঠলে পড়াশুনার চাপ কম সারাদিন ঘুরতে পারব কিন্তু না আসলে কলেজ জীবনেরি সবচেয়ে বেশি পড়াশুনা প্রয়োজন। দুর্জয় অনেকদিন হয় ক্লাসে আসে না আমাদের স্যার এবং অন্যান্য বন্ধুগুলো জিজ্ঞাসা করত তর বন্ধুর কি খবর আসেনা কেন।তেমন কোন উত্তর ছিল না একই কথা বলতাম" তার মা অনেক অসুস্থ"।তার মায়ের কি হয়েছে আমি  তাও জানতাম না। অনেকবার তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কিন্তু তারপরও জানা হয়নি।কিছুদিন পর শুনি যে তার মাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। যখন দেখতে গেলাম তখন টিউমার হওয়ার কথা জানতে পারি। তারপরের মাসেই শুনতে পারি তার মা ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।আমার বন্ধু দুর্জয়ের আর পড়া হল না।আমাকে একা একাই কলেজ যাওয়া আসা করতে হত। বাকি বন্ধুদের সাথে তেমন মেলামেশা আমি করতাম না।  কিন্তু দুর্জয় না আসার কারনে সবার সাথে মেলামেশা শুরু করি।তার মধ্যে একজন খুব কাছের বন্ধু পেয়ে যায় তার নাম হাসিবুল হাসান শান্ত। এই বন্ধু না থাকলে মনে হয় কলেজ জীবন কি তা জানাই হত না।শান্ত সবসময় আমার পাশে ছিল।দেখতে দেখতে ১ম বর্ষ প্রায় শেষের দিকে পড়াশুনা তেমন ভাল ছিল না। কোন কিছু তেমন পড়াও হয়ে উঠেনি সেই মুহুর্তে চিন্তা করলাম প্রাইভেট না পড়লে মনে হয় গতি নেই ১ম বর্ষ উত্তীর্ণ হওয়া কঠিন হয়ে যাবে।তাই প্রাইভেট পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রসায়ন,পদার্থ বিজ্ঞান এবং  উচ্চাতর গনিত পড়া শুরু করি।ফাইনাল পরীক্ষার জন্য আর মাত্র দেড় মাস সময় ছিল। তাই কিছু না বুঝলেও প্রাইভেট মিস দেওয়া হত না। যে হোস্টেলে আমি থাকতাম সেখান থেকে আমার প্রাইভেটের পথ অনেক দূর ছিল।প্রাইভেটে একা একা যেতে হত তারমধ্যে আমি হেটে হেটেই যাওয়া আসা করতাম।মাঝে মাঝে আসতে অনেক রাত হয়ে যেত।একদিন টিপ টপ বৃষ্টির সময় ছাতা নিয়ে প্রাইভেটে যাচ্ছিলাম তখন কিছু সংখ্যক ছিনতাইকারী আমাকে ধরে আর বলে" কিছু করবনা যদি যা আছে সব কিছু দিয়ে দেও।" এই কথা শুনেই বুঝতে পেরেছিলাম আমার কাছে  যা কিছু আছে সব নিয়ে যাবে তাই পালানোর সুযোগ খুজছিলাম। অবশেষে ৩জনকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলাম।আমার পালানোর পর মনে হয়েছিল না পালালেই ভাল হত পালানোর সময়তো আমার জীবনও চলে যেতে পারত। আমার পালানোর সবচেয়ে বড় কারন ছিল আমার প্রাইভেটের টাকা রক্ষা করা।তারপর আমি আরও পর পর কয়েকবার নেশাখোর এবং ছিনতাইকারীর শিকার হয়। সমস্ত কিছু বাধা অতিক্রম করেই আমাকে যেতে হত কিন্তু একবার পকেটে টাকা রেখেই বুঝতে পেরেছিলাম টাকা পকেটে থাকলেই বিপদ তাই খালি পকেটেই চলাফেরা করতাম।ছিনতাইকারীর শিকার হলেও পরবর্তীতে আর তেমন বিপদ হয়নি। সর্বশেষে ১ম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়া হল এক বিষয়ে খারাপ করলেও ২য় বর্ষে উত্তীর্ণ হতে পেরেছিলাম।২য় বর্ষে আসার পর  এমন একটা অনভুতি যে এখন আমি কলেজে পড়ি তারপর আবার ২য় বর্ষে,, মাঝে মাঝে মনে করতাম কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করুক যে আমি কোন ক্লাসে, জোর গলায় ২য় বর্ষের ছাত্র বলার অপেক্ষায় ছিলাম কিন্তু তেমন কেউ প্রশ্নই করেনি । ২য় বর্ষ খুব ভাল কাটে বন্ধুদের আপন করতে পেরেছিলাম আমাকেও আপন করে নিয়েছিল, শিক্ষকদের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়। ২য় বর্ষে উঠার পর শত শত বন্ধুকে কাছে পায় আবার কিছুসংখ্যক বন্ধুকে হারাতেও হয়। ২য় বর্ষটা ছিল খুবই উপভোগের মাঝে মাঝে ক্লাস ফাকি দিয়ে পার্কে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, ক্লাস পালানোর কোন সু্যোগ ছিল না তাই ওয়াল পেরিয়ে পলাতাম যদিও সি সি ক্যামেরা ছিল,মাঝে মাঝে টাই পড়া  আর ইন না করার জন্য শাস্তি পেতাম মাঝে মাঝে উপস্থিতি দেখানোর জন্য বন্ধুদের কাছে কলেজে না গিয়ে আমার আইডি কার্ড দিয়ে দিতাম আমার উপস্থিতি মওকুফ করার জন্য  ।এইগুলো ছিল আমার কলেজ জীবনে একটি অংশ, এইগুলো না করলে হয়তো কলেজ জীবন বৃথা হয়ে যেত।তবে হ্যা ২য় বর্ষে উঠার পর পড়াশুনাও করেছি একটু।২য় বর্ষে উঠার পর আমাদের ভবনটাও পরিবর্তন হয়। আমাদের ক্লাস রুমটা মেয়েদের ভবনের সম্মুখে রাখা হয় মাঝে মাঝে কলেজের বারান্দায় এসে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে মজা করা হত। অনেক প্রফুল্লময় ছিল আমার কলেজের ২য় বর্ষ। প্রাকটিকেল টিকমত না করার জন্য শাস্তি, রসায়ন পরীক্ষাগারে দুষ্টমি করার কারনে কিছু বুঝতাম না, ফাহিম স্যার পড়া ধরলে,কোন কিছুর পরীক্ষা করতে দিলে রোবট হয়ে দারিয়ে থাকা এইগুলোই তো ছিল কলেজ জীবন।কিছু কিছু স্যার এবং ম্যাডাম আমার সাথে এত মিশুক  ছিল যে মনে হত তারাই যেন আমার বন্ধু।অনেক ভাল লাগত যাইহোক তারপর মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে সবার কাছ থেকে 'র‍্যাগ ডে' করে বিদায় নেওয়া। তখন থেকেই কলেজ জীবন মনে শেষ হয়ে গেল বাকি ছিল শুধু এইচ এস সি পরীক্ষা দেওয়ার।তখন মনে হচ্ছিল এইতো মাত্র কিছুদিন আগে আসছিলাম এখনি কি আমার সুন্দর সময় শেষ হতে যাচ্ছে।
আলমগীর মনসুর (মিন্টু)মেমোরিয়াল কলেজ

Comments

  1. আমার নাম হাসিবুল ইসলাম শান্ত না। হাসিবুল হাসান শান্ত��

    ReplyDelete
    Replies
    1. দুঃখিত দোস্ত, সংশোধন করতাসি/

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

সফল হওয়ার জন্য যা দরকার

নার্সিং ভবিষ্যত